ভেরিকোস ভেইন বা বাঁকা শিরা একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে। পায়ে নীল বা বেগুনি রঙের ফোলা শিরা দেখা দিলেই বুঝতে হবে ভেরিকোস ভেইনের সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যাটি কেন হয়, এর লক্ষণগুলি কী, এবং এর চিকিৎসা কীভাবে করা যায়, এগুলি অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। এই ব্লগে আমরা ভেরিকোস ভেইনের কারণ, লক্ষণ, এবং বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশেষ করে ভেরিকোস ভেইন ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভেরিকোস ভেইন কেন হয়?
ভেরিকোস ভেইন হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে হাত বা পায়ের শিরাগুলো গিঁট পাকানো ও ফুলে ওঠা আকার ধারণ করে এবং ত্বকের নিচে গাঢ় বেগুনি বা নীলাভ রঙে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সাধারণত এটি বাহ্যিকভাবে অস্বাভাবিক দেখালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় কোনো সমস্যা তৈরি করে না। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চুলকানি, ব্যথা, ফুলে যাওয়া, খিঁচুনি বা ত্বকের রঙ পরিবর্তনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত শিরার ভেতরের ভালভগুলো দুর্বল হয়ে গেলে বা ঠিকমতো কাজ না করলে রক্ত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়, এতে শিরাগুলোর ওপর চাপ তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে সেগুলো ফুলে ওঠে ও বাঁকা হয়ে যায়। এই অবস্থাকেই ভেরিকোস ভেইন বলা হয়।
ভেরিকোস ভেইন ঘরোয়া চিকিৎসা
ভেরিকোস ভেইন কমানোর জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে কিছু কার্যকরী পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং সচেতন জীবনযাত্রা অনেকটাই উপকারে আসে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ পায়ের পেশীকে সক্রিয় রাখে এবং রক্ত চলাচল উন্নত করে। এটি শিরার উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পায়ের পেশীগুলোর টোনও ঠিক থাকে।
পায়ের বিশ্রাম নিন ও অবস্থান পরিবর্তন করুন
- একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস বাদ দিন।
- মাঝে মাঝে পা তুলে বিশ্রাম নিন।
- রাতে ঘুমানোর সময় বালিশ দিয়ে পা একটু উঁচু করে রাখুন।
পোশাক এবং জুতো নির্বাচনে সচেতন হোন
- আঁটসাঁট পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন। ঢিলেঢালা পোশাক পরলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
- উঁচু হিলের জুতো এড়িয়ে চলুন। সমান বা ফ্ল্যাট জুতো ব্যবহার করলে পায়ের উপর কম চাপ পড়ে।
পায়ের মালিশ ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
- নিয়মিত পায়ে হালকা গরম তেল দিয়ে মালিশ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে।
- খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানো উচিত। বেশি সোডিয়াম শরীরে পানি জমিয়ে শিরার ফুলে ওঠার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
- পেঁয়াজ, রসুন এবং লেবুর মতো খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। এগুলোতে থাকা ফ্ল্যাভিনয়েডস শিরার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার
ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান খুবই উপকারী হতে পারে:
- অ্যালোভেরা: এটি ত্বককে আরাম দেয় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- আদা: রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং প্রদাহ হ্রাস করে।
- মরিচ: এতে থাকা ক্যাপসাইসিন শিরার রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।
- ওটমিল: ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করে।
ভেরিকোস ভেইন ট্রিটমেন্ট ও মোজা
ভেরিকোস ভেইন সমস্যার সমাধানে রক্ত সংকোচনকারী মোজা এবং স্ক্লেরোথেরাপি দুটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে জনপ্রিয়। নিয়মিত এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে ভেরিকোস ভেইন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব –
রক্ত সংকোচনকারী মোজা
ভেরিকোস ভেইন চিকিৎসার প্রথম ধাপ হচ্ছে কম্প্রেশন থেরাপি, যা বিশেষ ধরনের রক্ত সংকোচনকারী মোজার মাধ্যমে করা হয়। এই মোজাগুলো রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং রক্তকে সঠিকভাবে উপরের দিকে পাম্প হতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো ভেরিকোস ভেইনের কারণে হওয়া ব্যথা, ফোলা এবং অস্বস্তি কমিয়ে জীবনকে আরামদায়ক করতে সাহায্য করে।
-
Tynor Compression Stocking I-16 (Classic Below Knee) for Varicose Veins
Knee Brace Price in Bangladesh ৳ 1,070.00 -
Tynor Knee Wrap Brace Hinged Neoprene J-15 for Knee Pain
Knee Brace Price in Bangladesh Original price was: ৳ 3,300.00.৳ 2,940.00Current price is: ৳ 2,940.00.
স্ক্লেরোথেরাপি
এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় একটি বিশেষ রাসায়নিক উপাদান, যাকে স্ক্লেরোজিং এজেন্ট বলা হয়। এটি ভেরিকোস ভেইনের কারণে হওয়া সমস্যাগুলো যেমন ব্যথা, ফোলা, ও অস্বস্তি হ্রাস করতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ভেইন সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ফ্লেবেক্টমি
ফ্লেবেক্টমি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ত্বকে ছোট ছোট কাট দেওয়া হয় এবং সেই কাটের মাধ্যমে সমস্যাযুক্ত ভেরিকোস ভেইন সরানো হয়। এই পদ্ধতিটি মাইক্রোসার্জারি নামে পরিচিত, কারণ এতে খুবই সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। প্রক্রিয়াটি সাধারণত লোকাল অ্যানেস্থেশিয়ার সাহায্যে সম্পন্ন হয়, যার ফলে রোগী কোনো ব্যথা অনুভব করেন না। ত্বকে দেওয়া কাটগুলো এতটাই ছোট যে খুব দ্রুত সেরে যায় এবং তেমন কোনো দাগও পড়ে না। এটি শুধু শারীরিক সমস্যা দূর করার জন্য নয়, বরং চেহারার সৌন্দর্য বজায় রাখার দিক থেকেও একটি চমৎকার পদ্ধতি।
ক্যাথেটার-ভিত্তিক পদ্ধতি
বড় বা গুরুতর ভেরিকোস ভেইনের ক্ষেত্রে ক্যাথেটার-ভিত্তিক পদ্ধতি একটি আধুনিক এবং উন্নত সমাধান। এই পদ্ধতিতে রোগীর ভেইনের ভেতর একটি সরু ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বা লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমস্যাযুক্ত ভেইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে রোগীর ভেইনের ভেতর রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া অনেকটাই আরামদায়ক, কারণ এতে ব্যথার পরিমাণ খুব কম এবং সার্জারির পরে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
ভেরিকোস ভেইন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ভেরিকোস ভেইন পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং উপসর্গগুলো অনেকটাই লাঘব করা যায়।
- যারা ভেরিকোস ভেইনে ভুগছেন, তাদের প্রতিদিন পায়ের শিরাগুলোর অবস্থা পরীক্ষা করা উচিত।
- দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত হাঁটা-চলা করা এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ভেরিকোস ভেইনের সমস্যাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি অগ্রসর হলে ব্যথা, রক্তক্ষরণ, এমনকি আলসারের মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।
ভেরিকোস ভেইনের চিকিৎসার জন্য যথাসময়ে সঠিক ডাক্তার ও পদ্ধতির পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিস্তারিত জানুন: পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ
সচরাচর সকলে যে প্রশ্ন গুলো করে থাকেন
ভেরিকোস ভেইন অপারেশন খরচ
ঢাকায় লেজার পদ্ধতিতে ভেরিকোজ ভেইন অপসারণের খরচ প্রতি পায়ে সাধারণত প্রায় ৳৬০,০০০ থেকে ৳৮০,০০০ এর মধ্যে হতে পারে। তবে ভেরিকোস ভেইনের চিকিৎসার মোট খরচ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। চূড়ান্ত খরচ মূলত নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়গুলোর ওপর, যেমন অস্ত্রোপচারের ধরন, চিকিৎসার সময় প্রয়োজনীয় যত্ন, রোগীর অবস্থা এবং ক্লিনিক বা হাসপাতালের সুবিধা। সঠিক খরচ নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করাই উত্তম।
ভেরিকোস ভেইন ক্রিম
ভেরিকোস ভেইন ক্রিম হলো একটি প্রোডাক্ট যা ভেরিকোস ভেইনের কারণে সৃষ্ট ফোলা ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং ত্বকের আরাম বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাইকেল চালালে কি ভেরিকোজ ভেইন কমে?
জোরে সাইকেল চালালে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪৯৮ থেকে ৭৩৮ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইকেল চালানো একটি চমৎকার শারীরিক ব্যায়াম। এই অভ্যাস রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।