পিঠের মাঝখানে ব্যথা (পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ) একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা অনেক মানুষকেই প্রভাবিত করে। এই ব্যথা হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে তীব্র, অসহ্য ব্যথায় পরিণত হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে। পিঠের মাঝখানে ব্যথার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, তাই এর উৎস বোঝা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ব্লগে, আমরা পিঠের মাঝখানে ব্যথা কেন হয়, এর সাথে সম্পর্কিত লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পিঠের ব্যথা কেন হয়?
পিঠের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং তা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণত, এই ব্যথার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে টেনশন, স্ট্রেন, আঘাত বা মেরুদণ্ডের ডিস্ক সম্পর্কিত জটিলতা। মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মাঝে অবস্থিত তরুণাস্থি সদৃশ প্যাড বা ডিস্কসমূহ বয়সের সাথে বা অতিরিক্ত চাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে পিঠে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। পাশাপাশি, দৈনন্দিন জীবনে ভুল ভঙ্গিতে বসা বা কাজ করা, দীর্ঘসময় ধরে ভারি জিনিস বহন করা, কিংবা চিকিৎসাগত সমস্যাগুলিও পিঠের ব্যথার একটি বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না এবং তা সামান্য বলে মনে করা হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি শরীরের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন চলাফেরায় অসুবিধা, মেরুদণ্ডের স্থায়িত্বে সমস্যা বা স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত।
পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ বা মেরুদন্ডে ব্যথা কারণ কি?
পিঠের মাঝখানে ব্যথা (থোরাসিক ব্যথা) বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এই ব্যথার মূল কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে তা মোকাবেলা করা সহজ হয়।
পিঠের পিছনে ব্যথার কারণ
- পেশী বা লিগামেন্টে চাপ বা আঘাত হঠাৎ ভারী কিছু তোলার সময়, ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানোর কারণে পেশী বা লিগামেন্টে চাপ পড়ে। সাধারণত এই ধরনের আঘাত সাময়িক, তবে পুনরাবৃত্তি হলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ডিস্ক প্রলাপস মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্থানচ্যুত হলে স্নায়ুতে চাপ পড়ে, যা পিঠের ব্যথার পাশাপাশি হাত বা পায়েও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- মেরুদণ্ডের অস্টিওআর্থারাইটিস বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে ব্যথা হতে পারে। তবে অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষত যারা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়।
- স্পন্ডিলোলিসিস মেরুদণ্ডের একটি কশেরুকা স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গেলে স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
- মেরুদণ্ডের সংক্রমণ জ্বরসহ পিঠে ব্যথা হলে এটি মেরুদণ্ডের সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। সংক্রমণের কারণে পিঠে কোমল এবং উষ্ণ অনুভূতি দেখা যায়।
- মেরুদণ্ডের ক্যান্সার মেরুদণ্ডে ক্যান্সার বা টিউমার স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
- মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়া দুর্ঘটনার ফলে কটিদেশীয় মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যেতে পারে, যা পিঠের মাঝখানে তীব্র ব্যথার কারণ হয়।
- অস্বাভাবিক মেরুদণ্ডের বক্রতা স্কোলিওসিস বা মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বক্রতার ফলে পিঠে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হয়।
- স্পাইনাল স্টেনোসিস মেরুদণ্ডের খালের সংকীর্ণতার কারণে স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে, যা পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- হার্নিয়েটেড ডিস্ক মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্থানচ্যুত হলে তা কাছাকাছি স্নায়ুগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে, যা পিঠের মাঝখানের ব্যথা বাড়াতে পারে।
পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ ও দৈনন্দিন অভ্যাসের প্রভাব
- ভুল ভঙ্গি দীর্ঘ সময় ধরে ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানোর কারণে পিঠের মাঝখানে চাপ পড়ে। বিশেষত অফিসে কম্পিউটারের সামনে অনেকক্ষণ বসে থাকা এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
- অনুপযুক্ত উত্তোলন ভারী বস্তু তোলার সময় সঠিক পদ্ধতি না মানলে পিঠে আঘাত লাগে। এটি পেশী, টেন্ডন বা লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন স্থূলতা শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা মেরুদণ্ডের উপর প্রভাব ফেলে এবং পিঠে ব্যথা বাড়ায়।
- নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব শারীরিক কার্যকলাপ না করলে পেশীগুলি দুর্বল হয়ে যায়। দুর্বল পেশী মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারে না, ফলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
- মানসিক চাপ মানসিক চাপ শরীরের পেশীগুলিকে টানতে পারে, যা পিঠের ব্যথার অন্যতম কারণ। উদ্বেগ এবং চাপ দীর্ঘমেয়াদে পিঠের সমস্যাগুলি জটিল করে তোলে।
পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ ও চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ
- ফিজিওথেরাপি একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে সঠিক ব্যায়াম করলে পিঠের পেশী শক্তিশালী হয়। এই ব্যায়ামগুলি দেহের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা সঠিকভাবে বসা, দাঁড়ানো এবং হাঁটার অভ্যাস করা জরুরি। কাজের সময় মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া এবং শরীর নাড়াচাড়া করা গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্যায়াম নিয়মিত স্ট্রেচিং এবং যোগব্যায়াম পেশীকে শক্তিশালী করে। বিশেষত কোমরের জন্য উপযোগী স্ট্রেচিং পিঠের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমিয়ে পিঠে চাপ কমানো যায়।
- বরফ সেঁক এবং উত্তোলন পদ্ধতি হালকা ব্যথার ক্ষেত্রে বরফ সেঁক আরাম দেয়। এছাড়া উত্তোলন পদ্ধতিগুলি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
Best Quality Electric Hot Water Bag
Hot Water Bag
Original price was: ৳ 580.00.৳ 450.00Current price is: ৳ 450.00.
Ice Bag for Cold Therapy and Injury Pain Relief
Pain Relief Products
Original price was: ৳ 500.00.৳ 350.00Current price is: ৳ 350.00.
Regular Hot Water Bag
Hot Water Bag
Original price was: ৳ 450.00.৳ 350.00Current price is: ৳ 350.00.
Reusable Hot and Cold Therapy Pack (Ice Pack)
Pain Relief Products
Original price was: ৳ 650.00.৳ 450.00Current price is: ৳ 450.00.
পিঠে ব্যথার জটিল কারণ
- ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ডিস্কের অবক্ষয়ের ফলে পিঠে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
- ডিস্ক সার্জারি পূর্ববর্তী সার্জারির ফলে ব্যথা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
- থোরাসিক ব্যথা এটি ঘাড়ের নীচে এবং কটিদেশীয় মেরুদণ্ডের উপরে অনুভূত হয়। অনিয়মিত অভ্যাস বা আঘাতের কারণে এটি দেখা দেয়।
পিঠের পিছনে ব্যথার কারণ এবং মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
পিঠের মাঝখানে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি মানসিকভাবে মানুষকে দুর্বল করে তুলতে পারে। উদ্বেগ, হতাশা এবং ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগলে মানসিক সমর্থন এবং সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিঠের ব্যথার ওষুধ
পিঠের ব্যথা কমাতে নিমেসুলাইড হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান। এটি একটি নন-স্টেরয়েডাল প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ, যা প্রদাহ ও ব্যথা উভয়ই কমাতে সাহায্য করে। সাধারণত তীব্র ব্যথা, মাসিকচক্রের খিঁচুনি, অপারেশনের পরে ব্যথা, মাইগ্রেন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট ব্যথা দূর করতে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে, এই ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। যাদের লিভার বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
পিঠের ব্যথা দূর করার ব্যায়াম
পিঠের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিক ব্যায়াম ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এটি কমাতে সাহায্য করতে পারে। পিঠের ব্যথা দূর করতে সহজ কিছু ব্যায়াম যেমন, পিঠ সমতল করে শুয়ে এক পা তুলে হাঁটু বাঁকিয়ে বুকের কাছে আনা মাংসপেশীকে শিথিল করতে কার্যকর। আয়েঙ্গার যোগব্যায়ামও পিঠের ব্যথা কমাতে উপকারী। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে মাঝে মাঝে উঠে পিঠ সোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পিঠের ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখানো উচিত?
পিঠের ব্যথা অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং এটির চিকিৎসার জন্য সঠিক পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পিঠের ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তীব্র হয়, বিশেষ করে রাতে বা শুয়ে থাকার সময়, তবে একজন অর্থোপেডিক ডাক্তার বা নিউরোসার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি ব্যথা এক বা উভয় পায়ে ছড়িয়ে পড়ে বা এর সঙ্গে দুর্বলতা, ঝনঝনি, কিংবা অসাড়তার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই রক্ষণশীল চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন ফিজিওথেরাপি, আকুপাংচার বা ম্যাসেজ কার্যকর হতে পারে। ফিজিওথেরাপিস্টরা পেশি ও মেরুদণ্ডের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম ও অন্যান্য থেরাপি প্রয়োগ করে, যা সার্জারির বিকল্প হিসেবে বেশ কার্যকর।
বিস্তারিত জানুন: বাম ও ডান অন্ডকোষ ব্যাথার কারন কি?
সচরাচর সকলে যে প্রশ্ন গুলো করে থাকেন
শক্ত বিছানায় কি পিঠে ব্যথা হয়?
শক্ত বিছানায় ঘুমালে পিঠে ব্যথা হতে পারে, বিশেষত যদি এটি শরীরের সাথে ঠিকভাবে সামঞ্জস্য না করে। শক্ত বিছানা মেরুদণ্ডের সঠিক সমর্থন দিতে পারে, তবে কারও জন্য এটি পেশিতে টান বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। ব্যথা হলে নরম কুশন ব্যবহার করুন।
পিঠে ব্যথা হলে কি মূত্রথলিতে চাপ পড়ে?
পিঠে ব্যথা হলে সাধারণত মূত্রথলিতে সরাসরি চাপ পড়ে না। তবে, যদি ব্যথার কারণ কিডনি বা মূত্রনালীর কোনো সংক্রমণ বা পাথর হয়, তাহলে মূত্রথলিতে চাপ বা প্রস্রাবে অস্বস্তি হতে পারে।
পায়খানা করার সময় পিঠের নিচে ব্যথা হয় কেন?
নিস্তেজ পিঠে ব্যথা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি উপসর্গ হতে পারে, কারণ এটি মলদ্বার বা কোলনে চাপ এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। যদি ব্যথা গুরুতর হয়ে ওঠে, তবে এটি নিম্নলিখিত সমস্যাগুলির ইঙ্গিত দিতে পারে: মেরুদণ্ডে আঘাত বা টিউমার, অথবা পিছনে কোনো স্নায়ু চাপে থাকা।