ঘাড়ের রগ ব্যথা একটি অস্বস্তিকর সমস্যা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে পারে। অনেক সময় এটি হঠাৎ শুরু হয় এবং আমাদের চলাফেরা বা কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এই সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং এর প্রতিকার জানতে পারলে আমরা সহজেই এটি এড়াতে পারি। চলুন, আজকের ব্লগে ঘাড়ের রগ ব্যথার কারণ এবং এটি থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
ঘাড়ের রগ ব্যথা কারণ গুলো কি?
ঘাড়ের ব্যথা একটি খুবই সাধারণ সমস্যা, যা প্রায় সব বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যেতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা কাঁধ, মাথার পেছন দিক, পিঠ বা হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর তীব্রতা এবং প্রভাব মানুষের জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘাড়ের রগে ব্যথার কারণগুলো
১. পেশিতে টান পড়া
দৈনন্দিন কাজকর্মের সময় ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান পড়লে ব্যথা হতে পারে। এটি ঘটে সাধারণত ভুল ভঙ্গিতে বসা, দীর্ঘ সময় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করা, কিংবা ভারী কোনো জিনিস বহন করার ফলে।
২. স্নায়ু সংকোচন (Nerve Compression)
ঘাড় থেকে হাতে নেমে যাওয়া স্নায়ুগুলো যদি চাপের মধ্যে পড়ে, তাহলে ঘাড়ে ব্যথার পাশাপাশি হাতেও ঝিনঝিন ভাব, অবশ অনুভূতি বা সুচ ফোটানোর মতো অস্বস্তি হতে পারে।
৩. হার্নিয়েটেড ডিস্ক
মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যে থাকা নরম টিস্যু (ডিস্ক) যদি সরে যায় বা স্থানচ্যুত হয়, তাহলে এটি স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি সার্ভিক্যাল স্পন্ডোলাইসিস নামে পরিচিত।
৪. আঘাত
যদি ঘাড়ে কোনো রকম আঘাত লাগে, যেমন দুর্ঘটনার ফলে, তখন পেশি, হাড় বা স্নায়ুতে সমস্যা হতে পারে। এটি ব্যথার অন্যতম কারণ।
৫. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
এটি একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলোর মধ্যে ব্যথা, ফোলা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।
৬. মেনিনজাইটিস
মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা আবরণী যদি সংক্রমিত বা প্রদাহিত হয়, তখন তা তীব্র ঘাড়ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৭. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেসের ফলে ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
৮. অন্য কারণ
- ভুল ভঙ্গিতে শোয়া বা বসা।
- বালিশ সঠিক উচ্চতায় না রাখা।
- দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে কাজ করা।
- শরীরের ভঙ্গি ঠিক না থাকা।
- উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রেস।
ঘাড় ব্যথা কখন গুরুতর হতে পারে?
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি থাকলে, ব্যথা হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- ব্যথা কয়েক দিনেও কমছে না।
- ঘাড়ের সঙ্গে হাত বা পায়ে দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে।
- মাথা ঘোরা, ঝিনঝিন ভাব বা অবশ অনুভূতি হচ্ছে।
- পায়খানা বা প্রস্রাবে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
- দুর্ঘটনার পর তীব্র ব্যথা শুরু হয়েছে।
ঘাড়ের রগ ব্যথা হলে করণীয়
ঘাড়ের ব্যথা যন্ত্রণাদায়ক হলেও সহজ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন ও যত্নের মাধ্যমে তা উপশম করা সম্ভব। আসুন জেনে নেই কার্যকর কিছু উপায়।
দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখুন
- বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন।
- কান ও কাঁধ একই সরলরেখায় থাকার চেষ্টা করুন।
- একটানা বসে কাজ না করে প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিটের বিরতি নিন। উঠে দাঁড়ান, হাঁটুন, কিংবা ঘাড় ও কাঁধ প্রসারিত করুন।
স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের ব্যবহার
- ফোনে কথা বলার সময় সেটটি কাঁধে চেপে রাখবেন না। হেডফোন বা স্পিকার ব্যবহার করুন।
- কম্পিউটার মনিটরের উচ্চতা চোখের সমতলে রাখুন।
- বই বা মোবাইল এমন উচ্চতায় ধরুন, যাতে ঘাড় নত করতে না হয়।
ঘুমের অভ্যাস ঠিক করুন
- মাঝারি শক্ত বিছানায় ঘুমান।
- ঘাড়ের নিচে একটিমাত্র সঠিক উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করুন, যাতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে।
ব্যথা কমানোর সহজ উপায়
হালকা ব্যায়াম করুন
- মাথা ধীরে ধীরে সামনে-পেছনে ও ডান-বাম দিকে ঝুঁকান।
- ঘাড় ক্লকওয়াইজ এবং অ্যান্টিক্লকওয়াইজ ঘোরান। মনে রাখবেন, ব্যথা হলে জোর করবেন না।
ঠান্ডা ও গরম সেঁক দিন
- বরফের কিউব তোয়ালেতে পেঁচিয়ে ব্যথার জায়গায় রাখুন।
- বরফের পরিবর্তে গরম পানির ব্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা সেঁক প্রদাহ কমায়, আর গরম সেঁক রক্ত চলাচল বাড়ায়।
ম্যাসেজ করুন
- জলপাই, নারকেল বা সরিষার তেল হালকা গরম করে ঘাড়ে বৃত্তাকারে ম্যাসেজ করুন।
- প্রতিদিন সকালে বা ব্যথা হলে এটি পুনরাবৃত্তি করুন।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন
- সামান্য গরম পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে একটি কাপড় ভিজিয়ে নিন।
- কাপড়টি ঘাড়ে রেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। দিনে দুইবার এটি করতে পারেন।
ঘাড়ের রগ ব্যথা হলে যেগুলো করণীয় নয়
- ভারী ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন না।
- একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
- নিজে থেকে জোর করে স্ট্রেচিং করবেন না।
ঘাড়ের রগের ব্যথা প্রতিরোধের উপায়
- প্রতি ৩০-৪০ মিনিট পর বিরতি নিয়ে শরীর এবং ঘাড়কে নড়াচড়া করান।
- ডেস্ক ও চেয়ার এমন উচ্চতায় রাখুন যাতে ঘাড়ে চাপ না পড়ে।
- মানসিক চাপ কমান। ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন।
ঘাড়ের রগের ব্যথা সারানোর উপায়
ঘাড়ের রগের ব্যথা আমাদের জীবনের একটি বিরক্তিকর সমস্যা, যা সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে ভুল ভঙ্গিতে বসা, অতিরিক্ত কাজের চাপ বা স্ট্রেসের কারণে হয়। দিনের পর দিন এই ব্যথা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ থেকে মুক্তি পেতে টেন্স থেরাপি (TENS Therapy) এবং ইলেকট্রিক থেরাপি মেশিন দারুণ একটি সমাধান। টেন্স থেরাপি মেশিন স্নায়ুতে হালকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ পাঠিয়ে ব্যথার অনুভূতি কমায়, আর ইলেকট্রিক থেরাপি পেশীগুলোকে শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। বাড়িতে সহজেই ব্যবহারযোগ্য এই যন্ত্রগুলো প্রাকৃতিকভাবে আরাম এনে দেয়, যেন আমাদের ক্লান্ত শরীর নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।
-
Dual Channel/2 Channel Taiwan Made TENS EMS Therapy Machine
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 15,000.00.৳ 12,000.00Current price is: ৳ 12,000.00. -
Ice Bag for Cold Therapy and Injury Pain Relief
Pain Relief Products Original price was: ৳ 500.00.৳ 350.00Current price is: ৳ 350.00. -
iStim EM-5200 Pelvic Floor Incontinence Stimulator- EMS Muscle Massager for Pelvic Therapy (Female)
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 28,000.00.৳ 25,000.00Current price is: ৳ 25,000.00. -
Rechargeable 2 Channel TENS/EMS Electric Therapy Machine- EM-6300A
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 20,000.00.৳ 18,000.00Current price is: ৳ 18,000.00. -
Reusable Hot and Cold Therapy Pack (Ice Pack)
Pain Relief Products Original price was: ৳ 650.00.৳ 450.00Current price is: ৳ 450.00. -
Tista TENS Muscle Stimulator and Multifunctional Massager Series
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 8,000.00.৳ 6,000.00Current price is: ৳ 6,000.00.
তবে শুধু থেরাপি নয়, ব্যথা কমাতে নিজের জন্য একটু সময় বের করাও খুব জরুরি। দিনের মধ্যে কয়েকবার হালকা স্ট্রেচিং, ঘাড় ঘোরানো বা ধীরে ধীরে সামনে-পেছনে ঝুঁকে পেশীগুলোকে আরাম দিন। দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে বসে কাজ করলে প্রতি ঘণ্টায় কয়েক মিনিট বিরতি নিন। এছাড়া ঘাড়ের পেশীতে গরম বা ঠান্ডা পানির সেক দিতে পারেন, যা ব্যথা উপশমে বেশ কার্যকর। যদি ব্যথা বেশি তীব্র হয়, তবে একজন থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ব্যথার জন্য ছোট এই যত্নগুলো শুধু শারীরিক আরামই দেবে না, আপনার মনকেও হালকা করবে।
বিস্তারিত জানুন: পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা কমানোর উপায়, কারণ ও কেন হয়?
সচরাচর সকলে যে প্রশ্ন গুলো করে থাকেন
ঘাড়ের নার্ভ ব্যথা কি মারাত্মক?
যদি ঘাড়ে ব্যথা আপনার কাজ বা দৈনন্দিন কার্যকলাপে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। তবে বিরল ক্ষেত্রে, ঘাড়ের ব্যথা একটি চিকিৎসাগত জরুরী অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষত, যদি এটি কোনো দুর্ঘটনার পর শুরু হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।
অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে কি ঘাড় ব্যথা হয়?
পেটের ভেতরে বা কোলনের বাম উপরের অংশে জমে থাকা গ্যাসের কারণে যে ব্যথা হয়, তা হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদ্রোগের ব্যথার মতো অনুভূত হতে পারে। এটি শরীরের উপরের অংশে, যেমন চোয়াল বা ঘাড়ে, অস্বস্তি বা ব্যথার কারণ হতে পারে।
ঘাড় ব্যথা কি রক্তচাপের সাথে সম্পর্কিত?
দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ের ব্যথা সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনা এবং স্বাভাবিক ব্যথা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার ব্যর্থতার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি কাঁধ ও ঘাড়ে ব্যথা হয়?
কঠিন মল পাস করার সময় বসার ভঙ্গি উপরের পিঠের ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কুঁজো হয়ে বৃত্তাকার কাঁধে চাপ দেওয়া হলে বুক সংকুচিত হয়, ঘাড় এবং পিঠের পেশীগুলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি হয়। এই ভঙ্গি স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করে, যা কাঁধের ব্লেডের মধ্যে বেদনাদায়ক খিঁচুনি এবং গিঁট তৈরি করতে পারে।