আমরা অনেক সময় ভাবি, বুকের ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু সত্যি বলতে, বুকের ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। হার্ট ছাড়াও, ফুসফুস, মাংসপেশি, হাড় বা স্নায়ুজনিত কারণে বুকের ব্যথা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা মারাত্মক হতে পারে, আবার অনেক সময় তা তেমন গুরুতর নয়। তাই, বুকের ব্যথা হলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বুকের ব্যথা কেন হয়?
অনেকেই পরিশ্রমের কাজ করার সময় বুকের ব্যথা অনুভব করেন, যা কখনো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে আবার কখনো মৃদু। অনেকেই এই ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এটি বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে। এ ধরনের বুকে ব্যথার কারণ ও লক্ষণ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মেডিনোভা হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান ফারুক।
পরিশ্রমের সময় যেমন সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, পাহাড়ে চড়া, দৌড়ানো, ভারী জিনিস তোলা বা বাজারের ব্যাগ নিয়ে হাঁটার সময় বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে বা রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে এই ধরনের ব্যথা দেখা দেয়। হৃদপিণ্ডের করোনারি রক্তনালিতে চর্বির আস্তরণ জমে সরু হলে বা ব্লক থাকলে রক্তপ্রবাহে ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে হৃদপিণ্ডের মাংসপেশিতে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব ঘটে এবং বুকে ব্যথা হয়।
এ ধরনের ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, তবে কখনো কখনো বাম বা ডান পাশেও হতে পারে। এই ব্যথা বুক থেকে গলা বা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমরা সাধারণত মনে করি, হৃদরোগ মানেই বুকে ব্যথা কিন্তু হৃদপিণ্ডের রক্তনালি বন্ধ হলে বুকের বাইরে অন্য জায়গায়ও ব্যথা হতে পারে, যেমন অনেকের ওপরের পেটে ব্যথা হয় যা গ্যাস্ট্রিক ব্যথা বলে মনে হয়।
কেউ কেউ আবার গলায় কিছু আটকে যাওয়ার মতো অনুভব করেন, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই ব্যথা পিঠ বা হাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, এমন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হার্টের সমস্যাজনিত কারণে বুকে ব্যথা
হার্টের সমস্যাজনিত যে কারণে বুকে ব্যথা হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে –
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (হার্ট অ্যাটাক)
হার্টে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে করোনারি ধমনী। এই ধমনিতে চর্বি জমে যদি ব্লক তৈরি হয়, তখন রক্তপ্রবাহে বাধা আসে এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটে। হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ হলো বুকে তীব্র ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে অনুভূত হয়, তবে অনেক সময় এটি বাম হাতে, পিঠে, বা গলায় ছড়িয়ে যেতে পারে। তীব্র ব্যথা ছাড়াও শ্বাস নিতে কষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা ও ক্লান্তির মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ চিকিৎসা না করা হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
মায়োকার্ডাইটিস
মায়োকার্ডাইটিস হলো হার্টের পেশিতে প্রদাহজনিত সমস্যা। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, যেমন কভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অথবা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে এ প্রদাহ হতে পারে। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে অনেক সময় মায়োকার্ডাইটিস হয়। মায়োকার্ডাইটিস হলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, যা অনেকটাই হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার মতো। এ ছাড়াও ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, এবং কখনো কখনো হৃদস্পন্দনের পরিবর্তনের লক্ষণও দেখা দিতে পারে। এটি অনেক সময় নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এ অবস্থাটি গুরুতর হয়ে ওঠে এবং হার্ট ফেইলিওরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই, বুকে ব্যথা ও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পেরিকার্ডাইটিস
হার্টের চারপাশে একটি পাতলা থলের মতো স্তর বা পর্দা থাকে, যাকে পেরিকার্ডিয়াম বলে। এই স্তরে কোনো কারণে প্রদাহ হলে তা পেরিকার্ডাইটিস নামে পরিচিত। এই রোগের সাধারণ লক্ষণ বুকে তীব্র ব্যথা, হার্টের চারপাশে ফ্লুইড বা তরল জমা হওয়া এবং কখনো শক বা ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। বুকে ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় এবং এটি শ্বাস নিলে বা নড়াচড়া করলে আরও বাড়তে পারে। ইনফেকশন, ক্যান্সার, অথবা অটোইমিউন ডিজিজের কারণে পেরিকার্ডাইটিস হতে পারে। এ রোগটি যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তবে এটি হার্টের কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং চিকিৎসা না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ
করোনারি আর্টারি ডিজিজ হল এক ধরনের হৃদরোগ, যা হার্টের ধমনিতে চর্বি জমে ব্লকেজ তৈরি হলে ঘটে। এই চর্বি বা প্লাক জমা হলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং হার্ট পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। এর ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি এবং অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। যদি এ রোগের চিকিৎসা না করা হয়, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধমনির ব্লকেজ আরও বড় হতে পারে এবং হার্টের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। করোনারি আর্টারি ডিজিজের লক্ষণ হিসেবে বুকে চাপ, ব্যথা, যা সাধারণত ব্যায়াম বা মানসিক চাপে বাড়ে।
মাইট্রাল ভালভ প্রোল্যাপস
মাইট্রাল ভালভ হলো হার্টের বাম অলিন্দ ও নিলয়ের মাঝে অবস্থিত একটি ভালভ, যা রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভালভে কোনো সমস্যা হলে বা এটি ঠিকমতো বন্ধ না হলে মাইট্রাল ভালভ প্রোল্যাপস ঘটে। এই অবস্থায় ভালভটি সঠিকভাবে বন্ধ না হওয়ার কারণে রক্ত কিছুটা পিছিয়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এটি লক্ষণ ছাড়াই থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এতে বুকে ব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা যায়। এই রোগটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে, ফলে প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম ও বিচ্ছেদ
অ্যাওর্টা বা মহাধমনী হলো প্রধান ধমনী যা হার্ট থেকে রক্তকে সারাদেহে পৌঁছে দেয়। যদি অ্যাওর্টা অস্বাভাবিকভাবে সম্প্রসারিত হয় বা ফেটে যায়, তবে হার্ট থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে, যা অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম ও অ্যাওর্টিক বিচ্ছেদ নামে পরিচিত। এই অবস্থায় বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা অনেক সময় পিঠের দিকেও ছড়িয়ে যায়। অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম ও বিচ্ছেদ উভয়ই জীবনসংকটাপূর্ণ অবস্থার কারণ হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, বা পারিবারিক ইতিহাসের কারণে অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম ও বিচ্ছেদের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
অ্যানজাইনা
অ্যানজাইনা হল হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত না পৌঁছানোর কারণে হওয়া একটি অবস্থা, যা সাধারণত বুকে তীব্র চাপের মতো অনুভূত হয়। এটি অনুভব করার সময় মনে হয় কেউ যেন বুকের উপর চেপে বসে আছে। এই ব্যথা কাঁধ, পিঠ, বাহু, এবং চোয়ালে পর্যন্ত ছড়াতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যানজাইনা হৃদরোগের একটি পূর্বলক্ষণ হিসেবে কাজ করে এবং যদি এটি অবহেলা করা হয়, তাহলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, যা হার্টের ধমনিতে প্লাক জমার কারণে হয়, অ্যানজাইনার প্রধান কারণ। তাই, অ্যানজাইনা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি
হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি হল এমন একটি অবস্থা যেখানে হার্টের পেশি, বিশেষ করে বাম নিলয়, অস্বাভাবিকভাবে ঘন হয়ে যায়। এই রোগটি সাধারণত পারিবারিক বা জিনগত কারণে ঘটে। হার্টের পেশি ঘন হওয়ার কারণে হার্টকে রক্ত পাম্প করতে সমস্যা হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছায় না। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ফুলে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এই অবস্থাটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
ফুসফুসের সমস্যাজনিত কারণে বুকে ব্যথা
ফুসফুসের সমস্যার কারণে বুকে ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়। ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে বুকের ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ফুসফুস আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি কোনো কারণে সমস্যায় পড়ে, তখন আমাদের শরীরেও এর প্রভাব পড়ে। পালমোনারি হাইপারটেনশন, প্লুরেসি, নিউমোনিয়া, পালমোনারি এমবলিজম, যক্ষা, অ্যাজমা এবং ফুসফুসের ধ্বংসজনিত নানা রোগ বুকের ব্যথার কারণ হতে পারে।
পালমোনারি হাইপারটেনশন
পালমোনারি হাইপারটেনশন একটি জটিল রোগ যা ফুসফুসে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়। সাধারণত পালমোনারি ধমনী হার্ট থেকে রক্তকে ফুসফুসে পৌঁছে দেয় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য, তবে এই ধমনীর কোনো কারণে সমস্যা হলে ফুসফুসে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে বুকে চাপের মতো ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, ক্লান্তি, এবং পায়ে ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পালমোনারি হাইপারটেনশন বাড়তে থাকলে হৃদপিণ্ডের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে, নইলে হৃদযন্ত্রও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
প্লুরেসি
প্লুরেসি তখন ঘটে যখন ফুসফুসের পর্দায় প্রদাহ হয়। আমাদের ফুসফুসের চারপাশে প্লুরা নামে একটি পাতলা পর্দা থাকে, যা ফুসফুসকে সুরক্ষা দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্লুরায় প্রদাহ দেখা দিলে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে যখন শ্বাস নিতে বা কাশতে হয়। এই ব্যথা অনেক সময় কাঁধেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত প্লুরেসি নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার, অথবা হৃদরোগের কারণে হতে পারে। প্লুরেসি হলে সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে না পারলে এটি জীবনসংকটাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই রোগে শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং কাশি ছাড়াও বুকে শ্বাস নেওয়ার সময় একটি অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়, যা খুব কষ্টদায়ক।
নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের একটি ইনফেকশন, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এর অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঘাম, রক্তাক্ত কাশি, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, এবং বমিভাব। নিউমোনিয়া সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হলে এটি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং ফুসফুসে পুঁজ জমে যাওয়া, রক্তে সংক্রমণ, এমনকি শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, এবং ফ্লু ও নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি নিউমোনিয়ার কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পালমোনারি এমবলিজম
পালমোনারি এমবলিজম হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ফুসফুসে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলি কোনো কারণে ব্লক হয়ে যায়। এটি অনেক সময় রক্তে জমাট বাঁধা কারণে ঘটে, যা ধমনীর রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। পালমোনারি এমবলিজমে সাধারণত ব্যথা শ্বাস নেওয়ার সময় আরও বেশি তীব্র হয়। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পিঠে ব্যথা, কফের সাথে রক্ত আসা, প্রচণ্ড ঘাম, আলোতে মাথা ব্যথা, এবং পায়ে ব্যথা। পালমোনারি এমবলিজম একটি জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। এর চিকিৎসা দ্রুত না করলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং হঠাৎ করে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
যক্ষা
যক্ষা, বা টিউবারকুলোসিস (টিবি), একটি সংক্রামক রোগ যা ফুসফুসকে প্রধানত প্রভাবিত করে। যক্ষায় আক্রান্ত হলে বুকে ব্যথা, কফের সাথে রক্ত আসা, ওজন কমে যাওয়া, জ্বর এবং রাতে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এই রোগটি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হলে তা কেবল ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যক্ষা অত্যন্ত সংক্রামক, তাই এর সংস্পর্শে থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যক্ষার লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি।
অ্যাজমা
অ্যাজমা একটি সাধারণ দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শ্বাসনালিকে প্রভাবিত করে। শ্বাসনালির ভিতরে প্রদাহ এবং শ্বাসনালি সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। অ্যাজমার সময় বুকে টান অনুভূত হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এর লক্ষণগুলির মধ্যে কাশি, হাঁচি, বুকে টান, এবং বুকে শিশির ফোটার মতো শব্দ শোনা যায়। অ্যাজমার লক্ষণগুলি ঠান্ডা বাতাস, ধুলাবালি, পোষা প্রাণীর লোম বা বিশেষ কিছু খাবারের সংস্পর্শে আসলে আরও বেশি তীব্র হতে পারে। অ্যাজমা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এর লক্ষণগুলোও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ফুসফুস ধ্বংস হয়ে যাওয়া (নিউমোথোরাক্স)
নিউমোথোরাক্স হলো ফুসফুসের একটি অবস্থা যেখানে ফুসফুসের বাইরে বাতাস জমে যায়। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং বুকে তীব্র ব্যথা হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন আঘাত, শারীরিক ধাক্কা বা বায়ুপথে সমস্যা হলে। নিউমোথোরাক্সের লক্ষণ হিসেবে বুকে তীব্র ব্যথা, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এটি চিকিৎসা না করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠতে পারে।
ব্রঙ্কোস্পাজম
ব্রঙ্কোস্পাজম হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শ্বাসনালির পেশীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে শ্বাসনালি সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সাধারণত হাঁপানি এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) রোগীদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ব্রঙ্কোস্পাজমে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস নেওয়ার সময় সিটির মতো শব্দ হয়।
পরিপাকতন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল সমস্যায় বুকে ব্যথা
বুকের ব্যথা অনেক কারণে হতে পারে। অনেক সময় পরিপাকতন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল সমস্যাগুলোর কারণে বুকের ব্যথা দেখা দেয়। এখানে এমন কিছু সাধারণ কারণ তুলে ধরা হলো যেগুলো গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল সমস্যা থেকে বুকের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
১. অগ্নাশয়ের প্রদাহ (প্যানক্রিয়েটাইটিস)
অগ্নাশয়ে প্রদাহ হলে একে প্যানক্রিয়েটাইটিস বলে। প্যানক্রিয়েটাইটিস সাধারণত দুটি ধরণের হয়: অ্যাকিউট এবং ক্রনিক।
- অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস: এই ধরণের প্রদাহ মূলত পিত্তথলিতে পাথর থাকলে হয়।
- দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক প্যানক্রিয়েটাইটিস: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে এই সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
এই রোগে লক্ষণগুলো সাধারণত পেটের উপরের অংশে ব্যথা দিয়ে শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো:
- পেট ফোলা অনুভব হওয়া।
- বমি আসা।
- জ্বর থাকা।
- ব্যথা পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়া।
২. খাদ্যনালীতে সমস্যা
খাদ্যনালীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, যা বুকের ব্যথার কারণ হতে পারে।
- খাদ্যনালীর সংকোচন সমস্যা (স্পাজম বা কন্ট্রাকশন): এই সমস্যা হলে খাদ্যনালীতে স্পাজম তৈরি হয়, যা বুকের ব্যথার কারণ হতে পারে। এতে গিলতে অসুবিধা, পুনঃনিঃসরণ, বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
- অন্ননালীর হাইপারসেনসিটিভিটি: কিছু মানুষের অন্ননালী খুবই সংবেদনশীল থাকে। এই কারণে তাদের ব্যথা অনুভব নাও হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এখনও এর সঠিক কারণ জানেন না। তবে ধারণা করা হয়, পাকস্থলীর কোষগুলো এসিডের প্রতি অতিসংবেদনশীল হতে পারে।
- অন্ননালীর ক্ষত: যদি অন্ননালীতে ক্ষত বা বিদীর্ণ হয়, তাহলে বুকের ব্যথা প্রচণ্ড হতে পারে। সাধারণত ট্রমাটিক ইনজুরির কারণে এই ক্ষত তৈরি হয়। এর ফলে বমি, ক্র্যাক সাউন্ড শুনা, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা ও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস হওয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৩. পেপটিক আলসার
পেপটিক আলসার পাকস্থলীর অভ্যন্তরের স্তরে ক্ষত বা ঘা তৈরি হলে তা থেকে বুক ও পেটে ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যায় সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়:
- পেটের উপরের অংশে ব্যথা।
- পেট ফোলা অনুভব হওয়া।
- বমি বমি ভাব।
- কখনো কখনো বমিতে রক্ত আসা।
যদিও পেপটিক আলসারে প্রচণ্ড ব্যথা হয় না, তবে বুকের মধ্যে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
৪. গ্যাস্ট্রো ইসুফেজিয়াল রিফ্লেক্স (GERD)
গ্যাস্ট্রো ইসুফেজিয়াল রিফ্লেক্স বা GERD হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলীর খাবার উপরের দিকে উঠে আসে। এতে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়:
- বুকের মধ্যে ব্যথা।
- পুনঃনিঃসরণ (রিফ্লেক্স)।
- বমি বমি ভাব।
- গিলতে অসুবিধা।
- কাশি এবং কন্ঠস্বর পরিবর্তন।
এই সমস্যাটি দূর করতে অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া লাগতে পারে।
৫. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ
দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ অনেক ক্ষেত্রে বুকের ব্যথার কারণ হতে পারে। সাইকোলজিক্যাল কিছু সমস্যা, যেমন ডিপ্রেশন, ড্রাগ অ্যাডিকশন এবং ডিলিউশন ইত্যাদি বুকের ব্যথার কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে।
নিঃশ্বাস নিলে বুকে ব্যথা হয় কেন?
অনেকেই বলেন, শ্বাস ছাড়ার সময় বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভব করেন বা মনে হয় বুকের বাম পাশে কিছু একটা চেপে বসে আছে। এটি কি হার্টের সমস্যা? বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করলেই যে হার্টের সমস্যা হবে, এমন নয়। পাকস্থলীর এসিডিটি, ফুসফুসের জটিলতা (যেমন সিওপিডি, নিউমোনিয়া, প্লুরেসি, ব্রঙ্কাইটিস) এসব কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
তাই, বুকের ব্যথা হার্টের সমস্যা নাকি অন্য কোনো কারণে হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে এবং সঠিক চিকিৎসা পেতে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে, হার্টের ব্যথার ক্ষেত্রে বুকের মাঝখানের ব্যথাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়?
হঠাৎ করে বুকের মাঝখানে, বাম পাশে, অথবা ডান পাশে ব্যথা হলে বসে না থেকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরি। অনেকেই ভাবেন, বুকের ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। কিন্তু বুকের ব্যথা সবসময় হার্ট অ্যাটাকের কারণে হয় না। পাকস্থলী, ফুসফুস বা পেশীর নানা সমস্যাও বুকের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বুকের ব্যথার কারণ বুঝতে কী ধরনের পরীক্ষা করা হয়? চলুন জেনে নিই এই টেস্টগুলো সম্পর্কে:
১. ইসিজি (ECG)
ইসিজি পরীক্ষা দিয়ে হার্টের ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা বৈদ্যুতিক প্রবাহ দেখা হয়। এটি হার্টের কার্যক্রমের একটি স্পষ্ট ছবি দেয় এবং হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনো হার্টের সমস্যা আছে কি না, তা বুঝতে সাহায্য করে। ইসিজি দ্রুত করা সম্ভব এবং এতে ব্যথার প্রকৃতি সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়।
২. রক্ত পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষা বুকের ব্যথার কারণ চিহ্নিত করতে সহায়ক। হার্টের সমস্যা হলে রক্তে কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই প্রোটিনগুলো দেখে হার্ট অ্যাটাকের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষ করে, ট্রোপোনিন নামক প্রোটিনের মাত্রা বাড়লে তা হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
৩. বুকের এক্সরে
বুকের ব্যথা ফুসফুসের কারণে হতে পারে। এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের আকার, অবস্থা এবং অবস্থান দেখা যায়। ফুসফুসের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস বা অন্যান্য সমস্যা আছে কিনা তা এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায়।
৪. সিটি স্ক্যান (CT Scan)
সিটি স্ক্যান বুকের ব্যথার গভীর কারণ বুঝতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, ফুসফুসের কোনো অংশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে কিনা বা ফুসফুসের ভেতরে অন্যান্য জটিলতা রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে সিটি স্ক্যান করা হয়। এটি এক্সরের চেয়ে বেশি নির্ভুল ও বিস্তারিত তথ্য দেয়।
৫. ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram)
ইকোকার্ডিওগ্রাম একটি আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি, যা শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে হার্টের ছবি তৈরি করে। এতে হার্টের ভেতরের চেম্বার, ভালভ ও রক্তপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি দেখা যায়। এই টেস্টের মাধ্যমে হার্টের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় এবং হার্টের কোনো সমস্যা থাকলে তা ধরা পড়ে।
হঠাৎ বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয়
বুকে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় তা মারাত্মক পরিস্থিতির পূর্বাভাস হতে পারে। তাই বুকে ব্যথা অনুভব করলে শুরুতেই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এখানে বুকে ব্যথা হলে কীভাবে প্রথমিকভাবে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে কী ধরণের চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
প্রাথমিক পদক্ষেপ
যদি হঠাৎ করে বুকে ব্যথা শুরু হয়, প্রথমে একজনকে শান্ত হয়ে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশ্রামে গেলে অনেক সময় ব্যথা কিছুটা কমে আসে। এছাড়া, বাড়িতে কোল্ড প্যাক থাকলে সেটি ব্যথার স্থানে হালকা চাপ দিয়ে ধরতে পারেন। তবে, বুকে ব্যথা হালকা হোক বা তীব্র, চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে যদি ব্যথা বুকের মাঝখানে অনুভূত হয় এবং এটি যদি অ্যাসিডিটি, হার্ট অ্যাটাক বা ফুসফুসের সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
বুকের ব্যথার কারণ বুঝে চিকিৎসক বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা দিতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, সার্জারি, এবং রিহেবিলিটেশন প্রক্রিয়া। নিচে এই চিকিৎসাগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
মেডিকেশন বা ওষুধ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
আর্টারি রিলাক্সার: নাইট্রোগ্লিসারিন
নাইট্রোগ্লিসারিন সাধারণত হার্টের ধমনীগুলোকে প্রসারিত করতে ব্যবহার করা হয়। এটি আর্টারি রিলাক্সার হিসেবে কাজ করে এবং ট্যাবলেট আকারে জিহ্বার নিচে রাখা হয়। এই ওষুধটি হার্টের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে তীব্র ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
অ্যাসপিরিন
বুকে ব্যথা যদি হার্টের সমস্যা থেকে উদ্ভূত হয়, সেই ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা হতে পারে। অ্যাসপিরিন রক্ত পাতলা করে রক্তের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি হার্টের ধমনীগুলোতে রক্ত প্রবাহ সহজ করতে সহায়তা করে।
ক্লট ব্লাস্টিং ড্রাগস
হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকলে চিকিৎসক ক্লট ব্লাস্টিং ওষুধ দিতে পারেন। এই ওষুধগুলি রক্ত জমাট বাঁধা ভেঙে দেয় এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
রক্ত পাতলা করার ওষুধ
যখন ফুসফুসের রক্তপ্রবাহকারী ধমনীগুলিতে ক্লট হয়ে যায়, তখন রক্ত পাতলা করার জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। এটি ফুসফুসের দিকে রক্ত চলাচল পুনঃস্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অ্যাসিডিটি কমানোর ওষুধ
বুকের মাঝখানে ব্যথা যদি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি থেকে হয়, তখন চিকিৎসক অ্যাসিড কমানোর জন্য ওমিপ্রাজল, ইউসিমিপ্রাজল, বা প্যান্টোপ্রাজলের মতো ওষুধ দিতে পারেন। এগুলি পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে অ্যাসিডিটির কারণে সৃষ্ট বুকে ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে।
অ্যান্টিডিপ্রেশেন্ট
যদি ব্যথা মানসিক উদ্বেগ বা স্ট্রেস থেকে সৃষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিডিপ্রেশেন্ট দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে মানসিক চাপ কমে এবং বুকে ব্যথার অনুভূতি হ্রাস পায়। এছাড়া, সাইকোথেরাপি বা মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া
ওষুধের মাধ্যমে অনেক সময় সমস্যার সমাধান না হলে, সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বুকের ব্যথা নিরাময়ে যে সার্জিক্যাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে:
অ্যানজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট প্লেসমেন্ট
হার্টের করোনারি ধমনীগুলো বন্ধ হয়ে গেলে অনেক সময় অ্যানজিওপ্লাস্টি পদ্ধতির মাধ্যমে বন্ধ ধমনীর কাছে বেলুনযুক্ত একটি টিউব প্রবেশ করানো হয়। ধমনী প্রসারিত করে পুনরায় রক্ত চলাচল শুরু করতে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজন হলে বেলুন অপসারণের পর স্টেন্ট প্লেসমেন্ট করা হয়, যা ধমনীকে খোলা রাখতে সাহায্য করে।
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি
যদি করোনারি ধমনী ব্লক হয়ে যায়, তবে বাইপাস সার্জারি করা হয়। যেখানে ব্লক হয়েছে সেই অংশের আগে ও পরে ধমনীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়, যাতে রক্ত চলাচল নির্বিঘ্নে চলতে পারে। এই প্রক্রিয়া হার্টে রক্ত চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক করে এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
জরুরী হার্টের সার্জারি
কিছু পরিস্থিতিতে, হার্টের অ্যাওর্টা ডিসেকশন হলে জরুরী ভিত্তিতে হার্ট সার্জারি করা প্রয়োজন হতে পারে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসা জরুরি।
ফুসফুসের পুনপ্রদাহ
যদি ফুসফুসে প্রদাহ বা ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাহলে ফুসফুসে একটি টিউব ঢুকিয়ে বায়ু সরবরাহ করা হয়, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা পুনঃস্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
টেন্স থেরাপি এবং ইলেকট্রিক থেরাপি মেশিন কেন দরকার?
টেন্স থেরাপি (TENS Therapy) এবং ইলেকট্রিক থেরাপি মেশিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করতে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান। যখন পিঠের ব্যথা,বুকে ব্যথা, আর্থ্রাইটিস বা দীর্ঘদিনের ক্রনিক ব্যথা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে, তখন এই থেরাপিগুলো প্রাকৃতিকভাবে আরাম এনে দেয়। টেন্স থেরাপি মেশিন স্নায়ুতে হালকা বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রেরণ করে ব্যথার সংবেদন কমায়, আর ইলেকট্রিক থেরাপি পেশীগুলোকে শিথিল করে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এগুলো শুধু শারীরিক আরামের জন্য নয়, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। সার্জারির পর, আঘাত বা অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে শরীর ক্লান্ত হলে এগুলো একধরনের শান্তি বয়ে আনে। সহজে ব্যবহারযোগ্য এই যন্ত্রগুলো অনেক সময় প্রিয়জনের মতোই যত্ন নিয়ে আমাদের ব্যথা কমিয়ে জীবন সহজ করে তোলে।
-
Jumper TENS Therapy Device JPD-ES210
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 7,000.00.৳ 5,000.00Current price is: ৳ 5,000.00. -
Rechargeable 2 Channel TENS/EMS Electric Therapy Machine- EM-6300A
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 20,000.00.৳ 18,000.00Current price is: ৳ 18,000.00. -
Tista TENS Muscle Stimulator and Multifunctional Massager Series
TENS/EMS THERAPY MACHINE Original price was: ৳ 8,000.00.৳ 6,000.00Current price is: ৳ 6,000.00.
বিস্তারিত জানুন: কোমরের ডান পাশে ব্যথা কেন হয় বিস্তারিত জানুন!!
সাধারণ জিজ্ঞাসা
গ্যাসের জন্য কি বুকে ব্যথা হয়?
হ্যাঁ, গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, যা বেশ সাধারণ এবং সাধারণত গুরুতর কিছু নয়। খাবার হজমের সময় আমাদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস তৈরি হয়। তবে, যখন অতিরিক্ত গ্যাস জমে, এটি পেট এবং বুকের মাঝামাঝি স্থানে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত জ্বালাপোড়া বা চাপের মতো মনে হয়।
দুশ্চিন্তার জন্য কি বুকে ব্যথা হয়?
অনেক সময় দেখা যায়, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের সময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। প্যানিক অ্যাটাক এবং অ্যাংজাইটি অ্যাটাক উভয়ই এর কারণ হতে পারে। এই দুই অবস্থার লক্ষণ অনেকটাই মিল রয়েছে, যদিও অ্যাংজাইটি অ্যাটাক সাধারণত তুলনামূলক কম তীব্র হয়। অ্যাংজাইটি অ্যাটাক সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত হয়, যাকে ট্রিগার বলা হয়। অন্যদিকে, প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ এবং কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ঘটে যেতে পারে।
আলসার হলে কি বুকে ব্যথা হয়?
হ্যাঁ, আলসারের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। খাদ্যনালির সমস্যা, পেপটিক আলসার, বা পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরে উঠে আসা এ ধরনের ব্যথার সাধারণ কারণ। এই ব্যথা সাধারণত পাঁজরের নিচে মধ্যভাগে অনুভূত হয় এবং খাবার খাওয়ার পর জ্বালাপোড়াও হতে পারে। পাশাপাশি, ভয় বা আতঙ্ক থেকেও বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই বুকে ব্যথা হলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
বারবার বুকে ব্যথা মানে কি?
বারবার বুকে ব্যথা অনুভব করা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। হৃদরোগ, যেমন মহাধমনী বিচ্ছেদ, বা ফুসফুসের সমস্যা, যেমন নিউমোনিয়া, এর কারণ হতে পারে। এছাড়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, যেমন অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বা হাড় ও পেশির সমস্যা, যেমন কস্টোকন্ড্রাইটিসও বুকে ব্যথার জন্য দায়ী হতে পারে। এমনকি উদ্বেগ বা আতঙ্কের আক্রমণ থেকেও বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই এই ধরনের ব্যথা বারবার হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।